২০১৪ সালের সহিংসতার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ

২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া সহিংসতার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তদন্তাধীন মামলাগুলোর তদন্তকাজ দ্রুত শেষ করতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ও এ সংক্রান্ত মনিটরিং কমিটিকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। যেসব মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া মনিটরিং করা এবং স্থগিত মামলাগুলো পুনরায় সচল করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে সরকার।

মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা উল্লেখ করে প্রতি মাসে প্রতিবেদন প্রেরণ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সংশ্লিষ্ট প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ওই বিভাগের সকল অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিবসহ বিভিন্ন অধিশাখা ও শাখার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে জননিরাপত্তা বিভাগ সংশ্লিষ্ট ১৮টি প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। এসব প্রতিশ্রুতির মধ্যে ইতিমধ্যে ১৩টি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং ৫টি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এ ছাড়া ২০১৫ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে জননিরাপত্তা বিভাগ সংশ্লিষ্ট ২৭টি নির্দেশনা প্রদান করেন। এরমধ্যে ১৪টি নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়েছে এবং ১৩টি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

২০১৫ সালের ৭ই মে প্রধানমন্ত্রী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর জন্য সংঘটিত সন্ত্রাসী ঘটনার মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন।

সভায় এই নির্দেশনার অগ্রগতি পর্যালোচনা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন ঠেকানোর লক্ষ্যে সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে মামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় ১লা জানুয়ারি ২০১৩ থেকে ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৭৮৭টি মামলা হয়েছে। ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৩৬টি মামলার তদন্ত সমাপ্ত হয়েছে। অবশিষ্ট ৫১টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। সভায় অবরোধ, হরতাল চলাকালীন সহিংসতার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাসমূহের তদন্ত, চার্জশিট, প্রতিবেদন ও মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশনার অগ্রগতি নিয়ে সভায় আলোচনা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ১লা জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ৩০শে জুন ২০১৫ পর্যন্ত সারা দেশে সহিংসতার ঘটনায় ১ হাজার ৮২৬টি মামলা হয়। মামলাসমূহের মধ্যে ৩৪টি মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করা হয়েছে। তদন্তাধীন মামলা রয়েছে ৮টি এবং অবশিষ্ট ১ হাজার ৭৮৪টি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। এ সময় তদন্তাধীন মামলাসমূহের তদন্তকাজ দ্রুত শেষ করার জন্য পুলিশ অধিদপ্তরকে তাগিদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যেসব মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া মনিটরিং করা এবং স্থগিত মামলাগুলো সচল করার ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সংঘটিত হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশের ভিত্তিতে করা মামলাসমূহের তদারকি কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য ২০১৫ সালে নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে সভায় সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে জুডিশিয়াল তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৪৩৫টি মামলা রুজু হয়। মামলাসমূহের মধ্যে ১৭টি মামলা উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত রয়েছে এবং ৩৩টি মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করা হয়েছে।

অবশিষ্ট ৩৮৫টি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। এসব মামলারও তদন্তকাজ দ্রুত শেষ করা, বিচার প্রক্রিয়া মনিটরিং এবং নিষ্পত্তিকৃত মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রতি মাসে প্রেরণের জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সকে নির্দেশনা প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৬ সালে সন্ত্রাস, নাশকতা, জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশনা নিয়েও সভায় আলোচনা হয়। একই বছর জঙ্গিবাদী ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনাকারী এবং নাশকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

সভায় সন্ত্রাস, নাশকতা, জঙ্গি তৎপরতা সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ অবহিত করার জন্য জেলা প্রশাসকদের অনুরোধের সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক ও আইসিটি অনুবিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধ, নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সারা দেশের জনপ্রতিনিধি, মসজিদের ইমাম, গ্রাম পুলিশ, গণ্যমান্য ব্যক্তি, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে বলে সভায় অবহিত করা হয়।

২০১৫ সালে ২০ দলীয় জোটের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পরিচালিত যৌথ অভিযান নিয়েও সভায় আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে সভায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এবং পুলিশ ও এনটিএমসি অনুবিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমানে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ সন্ত্রাসপ্রবণ এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। বিগত সময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোট যে সব এলাকায় সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে ওইসব এলাকাকে চিহ্নিত করে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধিসহ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *