নির্বাচন কমিশনের কলকাঠি নাড়ছে পশ্চিমা কূটনীতিকরা
গতকাল নির্বাচন কমিশন সাবেক নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সাম্প্রতিক সময়ে গাইবান্ধায় যে ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাকে সমর্থন জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক কর্মকর্তারা। তবে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, নির্বাচন কমিশনকে এরকম একটি বৈঠক ডাকার ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করেছে ঢাকাস্থ একটি পশ্চিমা দেশের দূতাবাস।
ওই দূতাবাসের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের যোগাযোগ বেড়েছে। নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্র থেকে পাওয়া খবরে দেখা গেছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তিনটি পশ্চিমা দেশের যোগাযোগ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাদের ইশারায় নির্বাচন কমিশন অনেকগুলো কাজ করছে বলেও বা একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ওই সূত্রটি বলছে যে, গাইবান্ধা নির্বাচনের পর সরকারের পক্ষ থেকে যখন ওই নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে তখন একটি প্রভাবশালী দেশের দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ ধরনের একটি বৈঠক ডাকার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই পরামর্শ গ্রহণ করেন এবং তড়িঘড়ি করে বৈঠক ডাকেন। যে সমস্ত নির্বাচন কমিশনাররা সেখানে গিয়েছেন তাঁরা নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ডের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তিনটি দেশের দূতাবাস নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এরা প্রতিনিয়ত নির্বাচন কমিশনকে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন এবং সহায়তা দেয়ার জন্য আশ্বাস দিয়েছেন।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, গাইবান্ধার উপ-নির্বাচন স্থগিত করার পিছনেও একটি প্রভাবশালী দেশের দূতাবাসের হাত ছিল। ওই দেশের দূতাবাস নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং জনগণের আস্থা অর্জনের অর্জনের জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। বর্তমান নির্বাচন কমিশনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কোয়াডভুক্ত দেশগুলো নির্বাচন কমিশনের সাথে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করে। তারা প্রতিনিয়ত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একটি যোগাযোগ শুরু করেছিল। এই যোগাযোগের ফলেই নির্বাচন কমিশন এখন একটি স্বতন্ত্র অবস্থায় দাঁড়াতে চাইছে বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর এ কারণে নির্বাচন কমিশন এখন নিজেদেরকে নিরপেক্ষ প্রমাণের চেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে যে, এই পশ্চিমা দেশগুলোর আসলে কি স্বার্থ রয়েছে? কেন তারা নির্বাচন কমিশনের পাশে দাঁড়াচ্ছে? এই সমস্ত দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছেন, এটির পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। তারা বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ দেখতে চায়। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ভাবে যেন হয় সেটা তারা চান এবং জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটুক, এটাই তাদের প্রত্যাশা। এ কারণেই তারা নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে চায়। নির্বাচন কমিশন যেন সক্রিয় শক্তি এবং স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, এই জন্যই তারা সহযোগিতা করছেন।
তবে বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, কূটনীতিকপাড়াকে সচল করার পিছনে সুশীল সমাজের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে এবং সুশীলদের পরামর্শেই কূটনীতিকরা এখন নির্বাচন কমিশনের ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে। এর ফলে আগামী নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন কিভাবে কাজ করবে, কিভাবে বিভিন্ন ঘটনার প্রতিক্রিয়া করবে তা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, নির্বাচন কমিশনের এই ভূমিকা ইতিবাচক। নির্বাচন কমিশন যত ক্ষমতাবান হবে এবং স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবেন ততই নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি ভালো হবে এবং অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে। সেটি নিশ্চিত করার জন্যই কূটনৈতিকরা নতুন নির্বাচন কমিশনকে শক্তি যোগাচ্ছে।