বিশ্ব বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশ?

বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে পিটার ডি হাস এর শাহীনবাগে যাওয়া এবং গুম নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করার প্রেক্ষিতে কূটনীতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এরপর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা বলেন। বিষয়টি ওয়াশিংটন পর্যন্ত গড়ায়। ওয়াশিংটনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নেন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।

এরপর বিষয়টি মীমাংসা করা হচ্ছে দুই দেশের কূটনৈতিক তরফ থেকেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোন রকম ঘাটতি ছিল না বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু এরকম একটি পরিস্থিতির মধ্যেই ঢাকায় রাশিয়ার দূতাবাস গত মঙ্গলবার এক বিবৃতি দেয়। এ বিবৃতিতে তারা বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাড়াবাড়ি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, গণতন্ত্রের সুরক্ষা বা অন্য কোনো অজুহাতে বাংলাদেশসহ তৃতীয় কোন দেশে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে রাশিয়া বদ্ধপরিকর। স্পষ্টতই মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সাম্প্রতিক তৎপরতার প্রেক্ষিতেই বিবৃতি দেওয়া হয় রাশিয়ার দূতাবাসের পক্ষ থেকে। আর এর পাল্টা জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস গতকাল বুধবার একটি টুইট বার্তা প্রকাশ করে। এতে বলা হয় যে, ইউক্রেনের ক্ষেত্রে রাশিয়া এই নীতির প্রয়োগ করছে কিনা সেটি দেখার বিষয়।

উল্লেখ্য যে, রুশ দূতাবাসের দেয়া বিবৃতিতে যেভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলানোর সমালোচনা করা হয়েছে, ঠিক একইভাবে রাশিয়া দূতাবাসকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন আক্রমণের জন্য দায়ী করেছেন। এর ফলে কুটনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বিশ্ব উত্তেজনা এবং বিভক্ত বিশ্বে বাংলাদেশ কি পক্ষ হয়ে যাচ্ছে? বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়। কিন্তু সেই জায়গা থেকে কি বাংলাদেশে সরে আসছে? এই প্রশ্নটি এখন কূটনীতিক অঙ্গনে বড় হয়ে উঠেছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে ১৪ ডিসেম্বর পিটার ডি হাসের শাহীনবাগে যাওয়া এবং এর আগে থেকে তার কিছু বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় একাধিক নেতা পিটার ডি হাসের এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

এমনকি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি এবং অবস্থানের সমালোচনা করেন। তিনি মানবাধিকার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখনকার অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করে প্রশ্ন তোলেন, পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট এর সময় কোথায় ছিল মানবাধিকার? একই দিনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও মার্কিন দূতাবাসের অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে গুম হচ্ছে সে বিষয়ে মাথা ঘামানোর জন্য মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে পরামর্শ দেন। তবে এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের দৌহিত্র সজিব ওয়াজেদ জয় একটা বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেছেন যে, ওয়াশিংটনে সামরিক কু হয় না। কারণ ওয়াশিংটনে কোনো মার্কিন দূতাবাস নেই। তার এই বক্তব্য বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের টানাপোড়ন চলছে? এরকম প্রশ্ন বেশ কিছুদিন ধরেই কূটনীতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয়। যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের কোনো টানাপোড়ন নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ভালো আছে। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য খুব একটা আমলে নিতে চাননা কূটনৈতিকরা। তারা মনে করেন যে, দু’দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক এর নিচে অবস্থান করছে এবং এটির সুযোগ নিতে পারে রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশগুলো। বাংলাদেশ এখন নানা কারণেই বিশ্বরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশে পরিণত হয়েছে। দ্রুত অগ্রসরমান এই দেশটির একটি বড় ধরনের বাজার এবং এই দেশের বাজার দখলের জন্য অনেকেই আগ্রহ রয়েছে। সেই আগ্রহের কারণেই বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যুতে এই পশ্চিমা দেশগুলো নানামুখী তৎপরতা গ্রহণ করছে। পাশাপাশি রাশিয়া এবং চীনের অবস্থানও বাংলাদেশের ব্যাপারে অনেকটাই সংবেদনশীল। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কূটনীতির কৌশল কি হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

One thought on “বিশ্ব বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশ?

  • December 24, 2022 at 6:17 pm
    Permalink

    Hate this government

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *