যুক্তরাষ্ট্র কি পিছু হটল?

বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের টানাপোড়েন বেশ প্রকাশ্যে উঠেছিল। বিশেষ করে ১৪ ডিসেম্বর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস শাহীনবাগে সাজেদুলের বাসায় যাওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি অনেকটাই অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছিল।

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের শাহীনবাগে যাওয়াটিকে আওয়ামী লীগ ভালোভাবে নেয়নি। ঐদিন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের অনুষ্ঠানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পিটার ডি হাসের শাহীনবাগে যাওয়ার তীব্র এবং প্রকাশ্য সমালোচনা করেন।

পিটার ডি হাসও কম যাননি। শাহীনবাগ থেকে ফিরেই তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে তার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। শাহীনবাগে তিনি যখন গিয়েছিল সেই সময় ‘মায়ের কান্না’ নামের একটি সংগঠনের কয়েকজন তাকে ঘিরে ধরেছিল।

এটি তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি- এরকম একটি দাবি করে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে নালিশ করেন। এই নালিশ শুধু বাংলাদেশের সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ছিলনা পিটার ডি হাস ওয়াশিংটনেও বাংলাদেশ সরকার তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি মর্মে অভিযোগ দাখিল করেন।

এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের বিষয়টি জানানো হয়েছিল। এরপর এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক রূপ পায়। রাশিয়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানো সমালোচনা করেন। পাল্টা বিবৃতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে রাশিয়া অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলিয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন উত্থাপন করেন। এরকম পাল্টাপাল্টি অভিযোগ যখন চলছে তখন হঠাৎ করে সব কিছু সুনশান হয়ে গেছে। তার মানে কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পিছু হটেছে নাকি তারা অন্য কোনো পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবকিছু ধীরে সুস্থে বিন্যস্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বড়দিন এবং ইংরেজী নববর্ষের ছুটি শুরু হয়েছে। সে কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন এইসব বিষয় নিয়ে তেমন নাক গলাতে পারছে না। তাছাড়া এখন সিনেট এবং প্রতিনিধি সভার দুটো নতুন অর্থবিল এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তোলপাড় চলছে। এর ফলে বাংলাদেশের দিকে সময় দেওয়ার সুযোগ তাদের নেই।

তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন কিছুই ভুলে যায় না, ছেড়ে দেয় না। অনেকের ধারণা যে, ইংরেজি নববর্ষের পরে বিষয়টি নিয়ে নুতন করে আবার শুরু হতে পারে। তবে কূটনীতিকদের কেউ কেউ মনে করছেন যে, আপাতত এ বিষয় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর এগোবে না। কারণ এখানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের একাধিক সমস্যা রয়েছে।

প্রথমত, তিনি শাহীনবাগে যে গেছেন সেটি সরকারের কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে গেছেন। শাহীনবাগে এর রকম একটি স্পর্শকাতর জায়গায় যাওয়ার আগে একজন কূটনৈতিক হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করা। কিন্তু সেই কাজটি তিনি করেননি।

দ্বিতীয়ত, মায়ের ডাক সংগঠনটি একটি বিতর্কিত সংগঠন। এ রকম বিতর্কিত সংগঠনের ডাকা তিনি কেন গেলেন সে ব্যাপারেও কোন সঠিক ব্যাখ্যা তার কাছে নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ সরকার এটার ফলে যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে তা দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নেতিবাচক ভূমিকা ফেলতে পারে। যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় না। আর এ কারণেই অনেক কূটনীতিক মনে করছেন শেষ পর্যন্ত এ যাত্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়তো বিষয়টিকে হজম করে ফেলবে। এটিকে বাড়তে দিবে না। তবে এ ঘটনায় বর্তমান সরকারের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব যে স্পষ্ট হয়েছে সেটি বোঝা যায়। এখন দেখার বিষয় যে, যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী পদক্ষেপ কি গ্রহণ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *