ফখরুল গ্রেপ্তার: নির্বাচনী মাস্টারপ্ল্যানের অংশ
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৮ দিন ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছে। তবে এই গ্রেপ্তার নিয়ে বিএনপির মধ্যে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সরকার আক্রোশের বশে গ্রেপ্তার করেছে নাকি সরকারের নির্বাচনী মাস্টারপ্ল্যানের অংশ এই গ্রেপ্তার, এ নিয়ে বিএনপির মধ্যেই সংশয় এবং সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা সকলেই জানেন। বিভিন্ন মন্ত্রীর সঙ্গে তার প্রায়শই যোগাযোগ হয় এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি সরকারের সঙ্গে দরকষাকষিও করে থাকেন। হঠাৎ করেই তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো, এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে এক ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিএনপির কোনো কোনো নেতা অবশ্য মনে করছেন যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একজন সৎ দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ। তিনি বিএনপিকে দক্ষ নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং তার নেতৃত্বে বিএনপি একটা আন্দোলনকে বেগবান করতে সক্ষম হয়েছিলো।
এ কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যেন আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কিন্তু বিএনপির অনেক নেতা মনে করছেন যে, সরকার নির্বাচন নিয়ে যে মাস্টারপ্ল্যান করেছে তার অংশ হিসেবেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং যথাযথ সময়ে তাকে মুক্ত করা হবে। তখন মুক্ত হয়ে তিনি বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করবে। এর মধ্যে দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে একজন জাতীয় নেতা হিসেবে জনগণের সামনে উপস্থাপন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাসচিব হলেও তিনি জাতীয় পর্যায়ে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নেতা নন। এমনকি বিএনপির মধ্যেও তিনি মহাসচিব হওয়ার আগে প্রথম প্রথম সারির নেতা ছিলেন না। কিন্তু সরকার বিভিন্ন সময় তাকে মামলা দিয়ে, এর আগে গ্রেপ্তার করে আস্তে আস্তে জাতীয় নেতৃত্বের সামনের কাতারে নিয়ে এসেছিলেন। আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে চাইছিলো যে, জিয়া পরিবারমুক্ত একটি সহনশীল বিএনপি, যারা সরকারের সঙ্গে একদিকে দরকষাকষি করবে, আন্দোলন করবে অন্যদিকে নির্বাচনসহ সকল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।
এরকম একটি বিএনপির নেতৃত্বের জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপযুক্ত। কিন্তু দলের ভেতর তার গ্রহণযোগ্যতা এবং ইমেজের সংকট রয়েছে। তাছাড়াও বিএনপিতে তার বিশ্বাসযোগ্যতারও ঘাটতি রয়েছে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে যদি কারাগারে রাখা যায় তাহলে দলের ভিতর তার প্রতি সহানুভূতি এবং আবেগ বাড়বে, দলে তার গ্রহণযোগ্যতাও সৃষ্টি হবে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা, এ নিয়ে কারও কারও মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।
বিএনপি অনেক নেতাই মনে করছেন যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ যদি খতিয়ে দেখা যায় তাহলে দেখা যাবে যে সরকারই তাকে আস্তে আস্তে জাতীয় নেতায় পরিণত করেছে, সরকারই তাকে পরিচিত করছে এবং জনপ্রিয় করেছে। যেমন- এর আগে ২০১৩-১৪ সালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বারবার গ্রেপ্তার করার ফলে তার ইমেজ বেড়েছে এবং জাতীয় পর্যায়ে তার গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।
কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর বিএনপির মহাসচিবের দলের অবস্থান নড়বড়ে হয়ে পড়ে এবং দলে তিনি রীতিমতো কোণঠাসা অবস্থায় ছিলেন। সেখান থেকে তিনি সরকারি দলের আক্রমণ এবং সমালোচনার কারণে আবার আস্তে আস্তে দল কর্তৃত্ব ফিরে পান। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি কিছুটা অবস্থান গ্রহণ করতে সক্ষম হন। কিন্তু সামনের দিনগুলোতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যদি কারাবরণ না করে দলকে নির্বাচনমুখী করতেন তাহলে তাকে আবার বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করা হতো।
সেই জায়গা তাকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্যই গ্রেপ্তার নাটক সাজানো হয়েছে বলে কোনো কোনো মহল মনে করেন। এই গ্রেপ্তারের ফলে তিনি দলের ভেতর অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হবেন এবং দলের তৃতীয় জনপ্রিয় নেতায় পরিণত হবেন। তাঁর নেতৃত্বে যদি বিএনপি নির্বাচন চায় তাহলে বিএনপির একটি বড় অংশই নির্বাচনমুখী হবে বলে অনেকেই মনে করেন। এই কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গ্রেপ্তার নাটক সাজানো হয়েছে কিনা, তা নিয়ে দলের অনেকের মধ্যেই সন্দেহ রয়েছে।
বাংলা ইনসাইডার