যুক্তরাষ্ট্র কি বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে চায়?
বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অস্বস্তি নিয়ে এখন কোনো লুকোচুরি নেই। দুটি দেশই এই সম্পর্কের অস্বস্তির কথা আড়ালে-আবডালে স্বীকার করছে, যদিও প্রকাশ্যে তারা কেউই সম্পর্কের অবনতির কথা বলছে না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ঘটনাবলি দু’দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনের স্বীকৃতি দিচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা যে, আওয়ামী লীগ সরকারকে পছন্দ করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একটি বিকল্প সরকারকে ক্ষমতায় আনতে চায়। বিভিন্ন দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এরকম আগ্রাসী কূটনীতিক সহজেই চোখে পড়ে। বিভিন্ন দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অপছন্দের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য মরিয়া চেষ্টা করেছে। কোথাও সফল হয়েছে, কোথাও সফল হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন হলো যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাকে ক্ষমতা আনতে চায়?
মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, যখন একটি সরকারকে তারা ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় বা হঠাৎ ক্ষমতা থেকে হটাতে চায় তখন আগে একটি বিকল্প নির্ধারণ করে নেয়। বিকল্প ঠিক করার পরই তারা ওই সরকারের বিরুদ্ধে নানারকম চাপ প্রয়োগ করে, সরকারকে অস্থির করে তোলে এবং আন্তর্জাতিকভাবে সরকারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এটির প্রথম পর্যায় চলছে বলে কোনো কোনো কূটনৈতিক মনে করেন। প্রশ্ন হলো যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো বিকল্প পেয়েছে?
বিকল্প পেলে তারা কোনটা? আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে কি তারা বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে চায়? একাধিক কূটনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন যে, বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার কোনো অভিপ্রায় নেই। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস অবশ্য বাংলাদেশে একাধিকবার বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আনতে চায় না বরং ভোটাধিকার প্রয়োগে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায়। এমন একটি সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় যে সরকারটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে এবং যে নির্বাচনে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে। মুখে যাই বলুক না কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা গোপন অভিপ্রায় রয়েছে। তবে কূটনীতিকরা মনে করেন যে, সেই অভিপ্রায় অবশ্যই বিএনপি নয়। নানা কারণে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র। বরং বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। বিএনপির ঘাড়ে সওয়ার হয়ে একটি রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
বিভিন্ন সূত্র গুলো মনে করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পছন্দের বিকল্প হলো সুশীল সমাজের নেতৃত্বে একটি সরকার। আর যে কারণেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রতি এক ধরনের নীরব সমর্থন দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে যে, শেষপর্যন্ত যদি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে মার্কিন স্বার্থগুলো অক্ষুণ্ণ হবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে চায় সেভাবে বাংলাদেশকে পরিচালিত করতে পারবে। তবে সুশীল সমাজের ক্ষমতায় আসার জন্য দেশে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি করা দরকার। অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি তখনই তৈরি হওয়া সম্ভব যখন বিএনপি রাজনীতির মাঠ গরম করবে, জ্বালাও-পোড়াও, সন্ত্রাস ও সহিংসতার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উত্তপ্ত করে তুলবে। কারণ, বিএনপি একমাত্র রাজনীতি দল যারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটা রাজনৈতিক আন্দোলন করতে পারে। আর এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুশীল সমাজ এবং সুশীল সমাজ নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলো এখন বিএনপিকে এক ধরনের সমর্থন দিচ্ছে। এই সমর্থনের প্রধান লক্ষ্য হলো বিএনপি যেন একটা দৃশ্যমান আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে যে আন্দোলনের ফলে সরকার চাপে পড়ে। তাহলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত সরকার গঠনের পথ পরিষ্কার হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। আর এটিই এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার প্রধান অংশ বলেই অনেকে মনে করছেন।
banglainsider