নির্বাচন ২৪: প্রকাশ্যে এগিয়ে বিএনপি, গোপনে আওয়ামী লীগ
আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মেরুকরণ ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। বিএনপি বলছে, তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে একাট্টা করতে চাইছে বিএনপি। আর এ কারণেই বিএনপির তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন জোট গড়ে ওঠেছে। ইতিমধ্যেই ১২ দলীয় জোট আত্মপ্রকাশ করছে। আরও কিছু কিছু জোট আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। এই সমস্ত জোটগুলোর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মোড়ল বিএনপি। বিএনপি রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে এক ঘরে করার চেষ্টা করছে।
বিএনপির কৌশল হলো, তারা মনে করছে যদি শেষ পর্যন্ত সকল রাজনৈতিক দলকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ করা যায় এবং নির্বাচন থেকে বিরত রাখা যায়, তাহলে সরকার চাপে পড়বে এবং ২০১৪ সালের মতো আরেকটি নির্বাচন করা সরকারের জন্য কঠিন ও দুঃসাধ্য হয়ে পরবে। সে রাজনৈতিক কৌশলেই বিএনপি এগুচ্ছে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা, যোগাযোগ ইত্যাদি করছে। বিএনপি মনে করছে, এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টি ছাড়া প্রধান প্রধান সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোই বিএনপির দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে এবং আগামী নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবে না। বিএনপি ছাড়াও জামায়াত, ২২টি রাজনৈতিক দল, গণতন্ত্র মঞ্চ, নাগরিক ঐক্য ইত্যাদি ছোটখাটো দলগুলো নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। বাম গণতান্ত্রিক মোর্চা, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে গঠিত, তারাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সোচ্চার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না এমন একটি অবস্থান গ্রহণ করেছে।
প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ অনেকটাই কোণঠাসা। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট এবং জাতীয় পার্টি ছাড়া আগামী নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে প্রকাশ্যে ঘোষণা কোনো রাজনৈতিক দলগুলো দেয়নি। আর এ ক্ষেত্রেই বিএনপি মনে করছে,তারা কৌশলে অনেকখানি এগিয়ে আছে। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলেই আগামী নির্বাচন বানচাল করা সম্ভব হবে। কিন্তু প্রকাশ্য কৌশলে বিএনপি এগিয়ে থাকলেও গোপন কৌশলে আওয়ামী লীগ এগিয়ে রয়েছে অনেক বেশি। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র দাবি করছে, গোপনে আওয়ামী লীগ প্রায় সবগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই শেষ পর্যন্ত আন্দোলনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে এবং বিনা চ্যালেঞ্জে সরকারকে ছেড়ে দেওয়া হবে না, এ রকম ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনের জালে আটকে ফেলেছে। জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং তিনশ আসনেই জাতীয় পার্টি নির্বাচন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের শরীক মহাজোটের যে দলগুলো রয়েছে, তারাও নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ মনে করছে, শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চসহ সদ্য যে দলগুলো রয়েছে, সে দলগুলো আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে করবে।
বিএনপির মধ্যে যারা সংলাপ করছে, এই দলগুলোর সঙ্গে গোপনে আওয়ামী লীগের যোগাযোগ হচ্ছে এবং অনেকেই এর মধ্যে নির্বাচনমুখী হবে বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দৃঢ়বিশ্বাস রয়েছে। এছাড়াও, বিএনপি আগামী নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চমক হবে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনে করছেন। তারা বলছেন, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে আসবে এবং এই অংশগ্রহণই আগামী নির্বাচনকে পূর্ণতা দিবে। বিএনপি যে নির্বাচনে আসবে তা নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই নিশ্চিত। তবে, শেষ পর্যন্ত বিএনপিতে ভাঙন হবে, না অভিন্ন বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে সেটি এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।
banglainsider