ডোনাল্ড লু কেন ঢাকায় আসছেন?
আগামী ১৪ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকায় আসছেন। তার ঢাকায় আসা নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, কূটনৈতিকদের নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য তিনি ঢাকায় আসছেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে যখন অস্বস্তি, টানাপোড়েন ঠিক সেই সময় মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
লু শুধু সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়টি দেখে থাকেন। এর আগে যখন পিটার ডি হাস শাহীনবাগে গিয়েছিলেন এবং সেখানে ‘মায়ের কান্না’ সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, তখন তিনি নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলেছিলেন। এই অভিযোগ তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে করেছিলেন এবং ওয়াশিংটনেও এ সংক্রান্ত একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। সে সময় ডোনাল্ড লু ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনারকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন এবং তার কাছে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তার প্রশ্নটি উত্থাপন করেছিলেন। সেই প্রেক্ষিতে লু-এর ঢাকা সফর বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।
গত কিছু দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশে সম্পর্ক নিয়ে নানা অস্বস্তির খবর শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটরা ক্ষমতায় আসার পর দুই দেশের সম্পর্কের প্রথম টানাপোড়েন শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণের পরই গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। পরের বছরই ডিসেম্বরে র্যাবের ওপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মানবাধিকার ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর নানা রকম চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করে। এ সময় বাংলাদেশে নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন পিটার ডি হাস। পিটার ডি হাস এসেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয়, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। পিটার ডি হাস সাম্প্রতিক সময়ে অত্যন্ত সরব ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। বিশেষ করে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশের আগে ৭ ডিসেম্বর পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সহিংসতার পর তিনি অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন।
ওয়াশিংটন এ সময় অন্তত তিনটি বিবৃতি দিয়ে বিরোধী মত প্রকাশ দমনের আহবান জানান সরকারকে। ১৪ ডিসেম্বর পিটার ডি হাস আচমকা শাহীনবাগে ‘মায়ের ডাক’ বলে একটি সংগঠনের এক নেতার বাসায় যান। যে নেতার এক আত্মীয় সাজেদুল ১০ বছর আগে গুম হয়েছিল বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে। কিন্তু একটি রাজনৈতিক সংগঠনের বিতর্কিত নেতার বাসায় হঠাৎ করে যাওয়াটাকে অনেকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে মনে করছেন। তার শাহীনবাগে যাওয়ার পর পরই ৭৭ সালে বিমান ছিনতাই ঘটনার সময়, যাদেরকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে, তাদের অত্মীয়-স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’ শাহীনবাগে যায় এবং পিটার ডি হাসের কাছে একটি স্মারকলিপি দিতে চায়। সেখানে কিছুটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যেই মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বিদায় নিতে হয়। এর পর দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নানা রকম জটিলতার কথা শোনা যাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন দাবি করেছেন যে, বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বেশ ভালো জায়গাতেই আছে। তবে অনেকে মনে করছেন, লু এর ঢাকায় সফর অনেক বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রথমত, তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সমঝোতা এবং সংলাপে নিয়ে আসার চেষ্টা করতে পারেন বলে জানা গেছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের মানবাধিকার এবং আগামী নির্বাচন নিয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব ব্যক্ত করতে পারেন বরে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই বলেছে যে, তারা আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায় এবং জনগণের মতামতের প্রতিফলন যেন ঘটে, সেটি নিশ্চিত করতে চায়। সেই প্রেক্ষাপটে লু সরকারি দল এবং বিরোধী দলকে কি বার্তা দিবে, সেটিই দেখার বিষয়। তবে বিভিন্ন মহল বলছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে যতই চাপ দিক না কেন, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের নির্বাচন কিভাবে হবে সেটি বাংলাদেশের জনগণই ঠিক করবে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে মোড়ল, তাদের প্রভাব যে কোনো দেশেই সব সময় থাকে। এখন দেখার বিষয়, লু ঢাকায় কোন বার্তা নিয়ে আসেন।