যে কারণে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেননি ডোলান্ড লু

দুই দিনের জন্য ঢাকা সফরে এসেছিলেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। দুই দিনের সফর শেষে গতকাল রোববার (১৫ জানুয়ারি) দিবাগত রা‌তে ঢাকা ছেড়েছেন তিনি। তার এই ঢাকা সফরের আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে নানা জল্পনা-কল্পনার কথা আলোচিত হয়েছিল। আলোচনায় ছিল তিনি ঢাকায় এসে হয়তো দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করবে। কারণ গত বছর ১০ ডিসেম্বরের ঘটনায় ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস বিবৃতি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। বিএনপির নেতৃবৃন্দও এ ধরনের ঘোষণার প্রত্যাশা করেছিল বলে দলটির একাধিক নেতা বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে। কিন্তু ডোলান্ড লু সে ধরনের কোনো ঘোষণাই দেননি।

আরও পড়ুন: পাশার দান উল্টে দিলেন ডোনাল্ড লু

এছাড়াও আলোচনায় ছিল যে, ঢাকা সফরে এসে ডোলান্ড লু হয়তো সরকার, সুশীল সমাজের প্রতিনিধির পাশাপাশি বিএনপির সাথেও বৈঠক করবেন। বিএনপিও সে রকম প্রত্যাশা করেছিল বলে জানা গেছে। কিন্তু ডোলান্ড লু সরকার, সুশীল সমাজের সাথে বৈঠক করলেও বিএনপির সাথে কোনো বৈঠক করেননি কিংবা দলের নেতৃবৃন্দের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎও করেনি। কেন ডোলান্ড লু বিএনপির সাথে বৈঠক করলেন না – এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে মার্কিন দূতাবাস বা বিএনপির পক্ষ থেকে কোন সুনির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুটি কারণের কথা বলছেন। এর মধ্যে হলো-

১. বিএনপিতে নেতার সংকট: বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির সাথে ডোলান্ড লু’র বৈঠক না হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো বিএনপিতে নেতার সংকট। তারা বলছেন, ডোনাল্ড লু একজন মার্কিন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। তিনি দেশটির মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি। তার সাথে বৈঠক করার মতো পদস্থ নেতা বিএনপিতে নেই। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দন্ডিত। তিনি প্যারোল মুক্তি নিয়ে ফিরোজায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারকে রহমান লন্ডনে পলাতক। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এ অবস্থায় ডোলান্ড লু’র সাথে বৈঠক করবেন এমন পদস্থ নেতা বিএনপিতে নেই।

আরও পড়ুন: ডোলান্ড লু’র ঢাকা সফর: চাপমুক্ত সরকার

২. সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা: বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির সাথে ডোলান্ড লু’র বৈঠক না হওয়ার আরেকটি কারণ হলো সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা। তিনি ঢাকা সফরে এসেছিলেন মূলত বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে। যা তিনি যৌথ ব্রিফিংয়ে স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি বাংলাদেশে এসেছি, আমাদের দুই দেশের বন্ধুত্বকে শক্তিশালী করতে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শাহীনবাগে পিটার ডি হাসের যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্টের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। সেই সম্পর্ক জোরদার করতে তিনি ঢাকা সফরে এসেছিলেন। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়ন করাটাই ছিল ডোলান্ড লু’র সফরের মূখ্য উদ্দেশ্য। যেকারণে বিএনপির সাথে তার বৈঠকের বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। এছাড়া বিএনপির যে দাবি, দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের, সে ব্যাপারে সরকার ডোলান্ড লু’কে আশ্বস্ত করেছেন। ডোলান্ড লুও বলেছেন যে, তার দেশে বিশেষ কোন দলকে সমর্থন করে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও চায় বাংলাদেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। আর সে কারণে আলাদা করে বিএনপির সাথে ডোলান্ড লু’র বৈঠক হয়নি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বাংলা ইনসাইডার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *