পাসপোর্ট অফিসে আসা তিন সেবাগ্রহীতাকে ‘পেটালেন’ ডিডি
ক্লান্ত হয়ে অফিসের চেয়ারে বসায় তিন সেবাগ্রহীতাকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক (ডিডি) মো. নুরুল হুদার বিরুদ্ধে। সোমবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে কুমিল্লা নগরী সংলগ্ন নোয়াপাড়া এলাকায় অবস্থিত কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গেলে দুই সংবাদকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ করে একজনের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন ডিডি। এরা হলেন সাপ্তাহিক দুর্নীতির সন্ধানে পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি রকিবুল ইসলাম ওরফে ম্যাক রানা ও দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার প্রতিনিধি মো. সাফি।
ভুক্তভোগী ওই তিন সেবাগ্রহীতার একজন মো. সাকিব। তার বাড়ি কুমিল্লার হোমনা উপজেলায়। তিনি বলেন, সোমবার সকালে গিয়েছিলেন পাসপোর্ট নেওয়ার জন্য। পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম অফিসের নিচতলায়। চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর ক্লান্ত হয়ে পাশে থাকা একটি চেয়ারে বসি। আমার সঙ্গে আরো দুজন সেবাগ্রহীতাও বসেন। এগুলো মূলত এক কর্মকর্তার টেবিলের পাশে রাখা চেয়ার ছিল। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে পাসপোর্ট অফিসের ডিডি মো. নুরুল হুদা নিচে নেমে এসে প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে সেবাগ্রহীতাদের পেটাতে থাকেন। চেয়ার ভেঙে গেলে ওই সেবাগ্রহীতাদের চড়-থাপ্পড় দিতে থাকেন তিনি।
আরেক ভুক্তভোগী মোহাম্মদ হাসান বলেন, আমাদের কোনো কথা না বলেই পেটাতে থাকেন তিনি। অথচ তিনি বললেই আমরা উঠে যেতাম। এ ঘটনার ছবি তুলতে গেলে সংবাদকর্মী রকিবুল ইসলাম রানা ও মো. সাফির সঙ্গে ডিডি অসদাচরণ করেন। তিনি একজন সংবাদকর্মীর মোবাইল ফোন নিয়ে যান। এ অফিসে সেবাগ্রহীতাদের হয়রানির কোনো শেষ নেই। ডিডি একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। দালাল ছাড়া এখানে কোনো কাজ হয় না।
এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে পাসপোর্ট অফিসে যান কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুর রহমান ও পরিদর্শক (তদন্ত) কমল কৃষ্ণ ধর।
পরিদর্শক (তদন্ত) কমল কৃষ্ণ ধর জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। সাংবাদিক লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি থেকে হয়েছে বলে দাবি করেছেন উপপরিচালক নুরুল হুদা। পরে তিনি সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ফেরত দিয়েছেন। আর সেবাগ্রহীতাকে মারধরের কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে।
সাংবাদিক ম্যাক রানা বলেন, আমার টোকেন নিয়ে নতুন পাসপোর্ট আনার জন্য পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলাম। ওই সময় দেখি, পাসপোর্ট অফিসের ডিডি আমার কিছুটা সামনে তিন-চারজন সেবাগ্রহীতাকে চেয়ার দিয়ে পেটাচ্ছেন। তখন জানতে চাইলে, ভুক্তভোগীরা জানান, তারা ভুল করে অফিসের চেয়ারে বসেছিলেন। এ জন্য তাদের পেটানো হয়। ঘটনার বিষয়ে পাসপোর্টের ডিডির কাছে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে আমাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন এবং সাফির মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন।
সাংবাদিক মো. সাফি বলেন, আমি আমার পাসপোর্টের কাজে সেখানে গিয়েছিলাম। সেবাগ্রহীতাদের চেয়ার দিয়ে পেটানোর ঘটনা দেখে পাসপোর্টের ডিডির কাছে কারণ জানতে চাই। তিনি উত্তেজিত হয়ে আমার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন এবং পুলিশ ও আনসার দিয়ে হেনস্তা করান। ৩ ঘণ্টা পর পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে দেন।
এসব বিষয়ে কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক মো. নুরুল হুদা জানান, ‘আমি কাউকে মারধর করিনি। আর সাংবাদিক আমার অনুমতি না নিয়ে ভিডিও করায় মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছি। পরে আবার ফেরত দিয়েছি। ‘ একপর্যায়ে সিসি টিভির ফুটেজ দেখতে চাইলে এই কর্মকর্তা রাগান্বিত হয়ে বলেন, আমি কারো কাছে বক্তব্য দিতে বাধ্য নই। আপনি যা পারেন লেখেন।